নন্দনতত্ত্ব বই সম্পর্কে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

 



সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সাথে প্রথম দেখায় প্রথম কথা ছিলো, " আপনি যদি এখন নন্দনতত্ত্ব লিখতেন তাহলে কি একই জিনিস লিখতেন?"


বেশ খানিক সময় নিয়ে আমার সাথে বিস্তারিত কথা বলছিলেন। ইচ্ছে ছিলো একটা সাক্ষাৎকার নেওয়ার। তা হয়নি।


বর্তমান থেকে চল্লিশ বছর আগে নন্দনতত্ত্ব নিয়ে বই লিখেছিলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আমি ভুল না করলে এটিই নন্দনতত্ত্ব নিয়ে বাংলাদেশে লেখা প্রথম বই। নন্দনতত্ত্বের নিদিষ্ট কোন সঙ্গা হয় না। তাই নিদিষ্ট   করে চিরন্তন কিছু বলে ফেলাও সম্ভব নয়। বিষয়বস্তু কিসের কারণে সুন্দর হয় বা আর্ট ফর্ম নিয়ে বিস্তারিত আলাপ জটিল বিষয়। কোনো মাপে বা ছাঁচে ফেলে বিচার করা সম্ভব নয়। তাই ক্ষণে ক্ষণে ধারণা অনেক পরিবর্তন হয়।


সৈয়দ স্যারের চল্লিশ বছর আগে লেখা নন্দনতত্ত্ব এখন তুমুল জনপ্রিয়। আমাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ প্রজন্ম এখন নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠছে, পড়ছে, মতামত ব্যক্ত করছে। এই বঙ্গ মরুভূমিতে সৌন্দর্যের যে চর্চা চল্লিশ বছর আগে শুরু করেছিলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সেব নিয়ে তার মতামত আর সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা তার লেখা নন্দনতত্ত্ব পড়ে সে-সব আলোচনা করতে পারি 


নন্দনতত্ত্ব বই সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন,


"মানুষের দেখার যত চোখ, তত নন্দনতত্ত্বের রূপ; দেখার যত উপায়, অনুধাবনের যত পথ, তত নন্দনতত্ত্বের বিস্তার। তাছাড়া, নন্দনতত্ত্বের বিষয়বস্তু যদি হয় সৌন্দর্য, তাহলে সুন্দর সম্পর্কে আমাদের ধারণার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নন্দনতত্ত্বের ব্যাখ্যা ও বর্ণনাও বদলাবে। ধ্রুপদী যুগে সুন্দরের বিবেচনা হতো শুধু সুন্দরের পরিপ্রেক্ষিতে, আধুনিক যুগে এসে অসুন্দরও হয়ে দাঁড়ালো সৌন্দর্য-বিবেচনার একটি পথ। উত্তরাধুনিক চিন্তায় সুন্দরকে এর বিপরীত চিহ্নসমূহ এবং অনুপস্থিতির প্রসঙ্গেও বিচার করা হয়। তাহলে কথা দাঁড়ায় এই যে, নন্দনতত্ত্ব নিয়ে বলা আমাদের কথাগুলোর অর্থ, দ্যোতনা ও কার্যকরতা এক প্রজন্মে অনেকটাই ভিন্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে। নন্দনতত্ত্ব সম্বন্ধে যুগের ধারণাতে যেমন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, বিশেষ করে মধ্য আশি থেকে উত্তরাধুনিকতার উত্থানের জন্য। তেমনি আমার নিজের চিন্তাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। এ বইটি এখন লিখলে ভিন্নভাবে লিখতাম। পরিমার্জনা করলে অনেক কিছুই পরিমার্জনা করতাম। কিন্তু ওই কাজগুলো ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিলাম আপাতত

Previous Post Next Post