বিদায় কেনিয়ার কিংবদন্তি সাহিত্যিক গুগি ওয়া থিয়োঙো

গুগি ওয়া থিয়োঙো


সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে যিনি তুলে ধরেছেন কেনিয়ার পরিবর্তনের ইতিহাস, উপনিবেশ থেকে গণতন্ত্রে রূপ নেওয়ার যাত্রা। যার কলম সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তেজী ঘোড়ার মতো ছুটতো তার কলম আজ স্তব্ধ। আফ্রিকার সমৃদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি ঔপনিবেশিক শাসকরা যে প্রক্রিয়ায় হটিয়ে দিয়েছিল, উপনিবেশ পরবর্তী কেনিয়াতে কি ঘটেছিলো সেসব বিষয়ে লিখেছেন বিস্তারিত। যিনি বহুবার নোবেল পুরষ্কারের নমিনেশন পেয়েও পুরষ্কার পাননি বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে। আফ্রিকার দুঃখের ইতিহাস লেখা মহান সেই কিংবদন্তী চির বিদায় নিয়েছেন আজ।



১৯৩৮ সালে জেমস থিয়োঙো গুগি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লিমুরু শহরে বেড়ে ওঠেন। নিম্নবিত্ত কৃষক ঘরে তার জন্ম। তার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তাকে ব্রিটিশ মিশনারিদের পরিচালিত বোর্ডিং স্কুল 'অ্যালায়েন্স'-এ পড়তে পাঠান। ১৯৫২ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত চলা মাউ মাউ বিদ্রোহ গুগির জীবনে বহু দিক দিয়ে গভীর ও মর্মান্তিক প্রভাব ফেলেছিল।১৯৫৯ সালে যখন ব্রিটিশরা কেনিয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন গুগি পড়াশোনার জন্য উগান্ডায় পাড়ি জমান। তিনি ভর্তি হন আফ্রিকার অন্যতম খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যাকারেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে এক লেখক সম্মেলনে গুগি তাঁর প্রথম উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি ভাগ করে নেন খ্যাতনামা নাইজেরিয়ান সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবের সঙ্গে। আচেবে সেটি যুক্তরাজ্যের প্রকাশকের কাছে পাঠান। পরে ১৯৬৪ সালে 'উইপ নট, চাইল্ড' নামে বইটি প্রকাশিত হয় এবং সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়। এটি ছিল পূর্ব আফ্রিকার কোনো লেখকের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি ভাষার উপন্যাস।


১৯৭৭—গুগির জীবন ও সাহিত্যকর্মে এক বড় মোড়। ওই বছর তিনি নিজের নাম বদলে 'গুগি ওয়া থিয়োঙো' রাখেন। উদ্দেশ্য ছিল, ঔপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত একটি পরিচয় নেওয়া। একই সঙ্গে ইংরেজি ছেড়ে কিকুয়ু মাতৃভাষায় লেখার সিদ্ধান্ত নেন।

সে বছরই তিনি লেখেন নিজের শেষ ইংরেজি উপন্যাস 'পেটালস অব ব্লাড'। আগের বইগুলোতে তিনি ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনা করলেও, এই উপন্যাসে তিনি স্বাধীন কেনিয়ার নতুন শাসকদের নিশানা করেন। তাদের তুলে ধরেন সাধারণ মানুষকে ছেড়ে যাওয়া এক অভিজাত শ্রেণি হিসেবে। তার জীবনের পুরোটা সময়জুড়ে আফ্রিকান সাহিত্যে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় লেখা বই-ই ছিল প্রধান।


২০২০ সালে এলএ টাইমসকে গুগি বলেছিলেন, 'আমার নিজের পরিবারই এখন আমার সাহিত্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী। ঐ যে উপনিবেশিক মনোভাবের বিরুদ্ধে তিনি লেখা শুরু করেছিলেন তা আজ ঘরেঘরে।উপনিবেশিক মনোভাব আস্তে আস্তে গিলে খাচ্ছে আফ্রিকার সাহিত্য সংস্কৃতির এমনকি নাগরিক জীবনও। তারা বিলিন হয়ে যাচ্ছে জাতি হিসাবে। এমনকি লেখকরাও লেখালেখি করছেন ভিন্ন ভাষাতে। আফ্রিকার উপর সাম্রাজ্যবাদের কালো থাবার ইতিহাস পাঠের জন্য গুগি সর্বদা প্রাসঙ্গিক।

Previous Post Next Post