যুদ্ধক্ষেত্রে যিনি অস্ত্রের পাশে রাখতেন কবিতা

 চে গুয়েভারা

 

"আমার কোনো দেশ নেই, ধর্ম নেই। পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকে ক্ষুধার চিৎকার শোনা যাবে সেই পর্যন্ত আমার বিস্তৃতি।"


 --- চে গুয়েভারা


বলিভিয়ার লা হিগুয়েরা নামের সীমান্তবর্তী এক গ্রামের স্কুলঘরে ১৯৬৭ সালে বিপ্লবী এরনেস্তো চে গুয়েভারাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। তার আগে তিনি ছিলেন লড়াকু সৈনিক, নির্ভীক যোদ্ধা। চিলির বিপ্লবী কবি পাবলো নেরুদা তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন ‘চে’কেই আমরা দেখি বিষণ্ন এক যোদ্ধার প্রতিকৃতিতে, যিনি ভালোবাসতেন বিপ্লব আর কবিতা। যার অস্ত্রের পাশেই থাকত কবিতা।’


নেরুদার আত্মজীবনী মেমোয়ার্সের বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি, 


" চে রাতে গেরিলাদের কবিতা পড়ে শোনাতেন। এত বছর পর এখনো ভাবলে আমার শরীর কেঁপে ওঠে, 

‘আমরা বিদায় বললাম, কখনো আর তাঁকে দেখিনি। তারপর বলিভিয়ার জঙ্গলে তাঁর লড়াই, তাঁর করুণ মৃত্যু। কিন্তু এখনো চে গুয়েভারা আমার কাছে এমন এক ভাবুক, সাহসিক লড়াইয়ে যিনি অস্ত্রের পাশে সব সময় কবিতাও রাখতেন। "


চে বিপ্লবের প্রয়োজনে ছুটে গেছেন গুয়াতেমালা, কিউবা, পেরু, কঙ্গো, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, পানামা, এল সালভেদর, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম এবং বলিভিয়ায়। আর এই বিপ্লব সংগঠিত করতে গিয়ে ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর মার্কিন সমর্থনপুষ্ট বলিভীয় সেনাবাহিনীর হাতে আহত অবস্খায় বন্দি হন চে গুয়েভারা।


চে ধরা পড়ার পর বলেছিলেন,

"Don't shoot.

I am Che Guevara and I am worth more to you live than dead."


চে-কে যখন বলিভিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের একটি স্কুলে বন্দী করে রাখা হয়। তার শেষ ইচ্ছা জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেছিলেন, তিনি ওই স্কুলের শিক্ষকের সাথে দেখা করতে চান।


একজন শিক্ষিকা তার সাথে দেখা করতে এলে, চে বলেছিলেন, “এই স্কুলের পরিকাঠামো অনেক খারাপ। বাচ্চারা এভাবে পড়তে পারে না। স্কুল মেরামতের ব্যবস্থা করুন।”


শিক্ষিকা বলেছিলেন, “আমাদের স্কুল সরকারী অনুদানে চলে।”

চে বলেছিলেন, “আপনি কি জানেন সরকারী অফিসিয়ালরা নিজেরা মার্সিডিজ চড়ে বেড়ান।”

শিক্ষিকা “হ্যাঁ” বললেন।


চে’র জবাব ছিলো, “আমাদের লড়াই ঠিক এখানেই।শিক্ষা ব্যবস্থা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে গরীব থেকে ধনী একই শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, এমন নয় যাদের টাকা আছে শুধু তারাই শিক্ষিত হবে” 


এই দুঃসাহসী তরুণ রাষ্ট্রের বড় পদ থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে পৃথিবীময় বিপ্লব ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখালেন।যে স্বপ্নে আজও বিভোর কোটি তরুন।


বিপ্লব চিরজীবী হোক।

বিপ্লবী সারাজীবন বিপ্লবেই সুন্দর।

Previous Post Next Post